Cookie Consent by Cookie Consent

Header Ads

Header ADS

একজন মুজাহিদের গল্প!



আরবের এক সুদর্শন,কোটিপতি বালকের গল্প বলবো আজ,  যার নাম মুস'আব ইবনে উমাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু । প্রখ্যাত কুরাইশ বংশে জন্ম নেয়া এই বালকটি ছিলেন সেইসময় সবচেয়ে বেশি সম্পদশালীদের একজন!'সোনার চামচ' মুখে নিয়ে জন্ম নেওয়া এই যুবক সম্পর্কে  রাসূলুল্লাহ ﷺ  বলেন, "মক্কায় মুস'আবের চেয়ে সুদর্শন আর উৎকৃষ্ট পোশাকধারী আর কেউ ছিলো না।"
.
মুস'আব সেই যুবক যে কিনা তখনকার সময়ে সবচেয়ে দামী জামা, জুতা, সুগন্ধি ব্যবহার করতেন! এমনকি একটি জামা তিনদিনে বেশি পরতেন না!

রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন কালিমার দাওয়াত দেওয়া শুরু করলেন, সেই খবর মুস'আবের কাছে পৌঁছলো।
তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সাক্ষাৎ করলেন এবং আল্লাহর রাসুলের প্রতি বিমোহিত হয়ে প্রথম সাক্ষাতেই ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন।

এমন একটা ভয়াবহ সময়ে তিনি 'ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন, যখন কেউ মুসলমান হলে তাঁর উপর নেমে আসতো অকথ্য নির্যাতন। খাব্বাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর চামড়া পোড়ানো হয়েছিল , বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে উত্তপ্ত রোদের মধ্যে অত্যাচার করার ইতিহাস তার জানা ছিল! ভাবুনতো, বিলাসবহুল জিন্দেগী ছেড়ে দিয়ে নিজের জীবনকে 'ঝুঁকি'র মধ্যে ফেলে আল্লাহর কালিমা'কে বুকে ধারন করা কতটা কষ্টকর হতে পারে!
.
মুস'আবের ইসলাম গ্রহণের কথা শুনে তাঁর মা খুন্নাস বিনতে মালিক তাকে একটা ঘরের মধ্যে বন্দি করে রাখেন এবং চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন ইসলাম ত্যাগ করার জন্য। কিন্তু মুস'আব তাতে রাজি হন নি! তখন মা তাকে 'ত্যাজ্যপুত্র' ঘোষণা করেন! অভাব অনটনের কথা চিন্তা না করে মুস'আব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ইসলামের প্রতি অটল থাকেন।
.
অতপর মুস'আব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দরবারে উপস্থিত হন, তখন তাকে দেখে সাহাবীরা চোখ নামিয়ে ফেলেন, কেউ কেউ কান্না শুরু করেন। কারণ তাঁর পরনে ছিলো তালি দেওয়া এক জীর্ণ জোব্বা। যে মুস'আব আরবের সবচেয়ে দামী জামা পরতেন, যে মুস'আব ছিলেন আরবের একজন মডেল, ইসলাম গ্রহণ করার পর সেই মুস'আবের গায়ে কিনা তালি দেওয়া এক জীর্ণ জামা!
.
ইসলাম মেনে চলতে গিয়ে নিজের বিলাসী জীবন ত্যাগ করতে বিন্দুমাত্র বিচলিত ছিলেন না এই সাহাবী।
তাকে এই অবস্থায় দেখে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন – "মুস'আব এসবকিছু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ করে এসেছে এবং সে রাসূলের কাজে নিবেদিত করেছে।"
.
উহুদ যুদ্ধের দিন মুস'আব ইবনে উমাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু পান ইসলামের পতাকা বহন করার মহান দায়িত্ব। যুদ্ধের ময়দানে যখন গুজব রটলো, রাসূলুল্লাহ ﷺ শাহাদত বরণ করেছেন তখন অনেক সাহাবী যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকলেন। কিন্তু মুস'আব ইবনে উমাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু যুদ্ধ চালিয়ে যেতে লাগলেন আর ঘোষণা করতে লাগলেন 'ওয়ামা মুহাম্মাদুন ইল্লা রাসূল, কাদ খালাত মিন কাবলিহির রাসূল' – মুহাম্মদ একজন রাসূল ছাড়া কিছুই নন, তাঁর পূর্বে বহু রাসূল অতিবাহিত হয়েছেন।
.
কাফিররা তাঁর ডান হাত কেটে ফেললে তিনি বাম হাতে পতাকা তুলে ধরেন। তাঁর বাম হাতটি কেটে ফেললে তিনি দুই হাতের বাহুর মাঝখানে ইসলামের ঝাণ্ডা তুলে ধরেন। এক পর্যায়ে একটা তীর এসে তাকে আঘাত করে। তীরের আঘাতে ইন শা আল্লাহ তিনি শহীদ হন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজীউন)
.
ওই মূহুর্তে মুসলমানরা মারাত্মক সমস্যাগ্রস্থ ছিলেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি গর্তের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কাফিররা উনাকে তীর নিক্ষেপ করলে সেই তীর যাতে উনার গায়ে না পড়ে সেজন্য সাদ বিন আবী ওয়াক্বাস (রাঃ) ওনাকে আড়াল করে রেখেছিলেন। আর এতে করে একটি নয়, দুইটি নয়, ৮১টি তীর সাদ বিন আবী ওয়াক্বাসের (রাঃ) শরীরে লেগেছিলো। তবুও আল্লাহর রাসূলের গায়ে যাতে তীর না লাগে সেজন্য তিনি সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন।

এদিকে মুস'আব ইবনে উমাইর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) নিহত হলে কাফিররা ভেবেছিলো আল্লাহর রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  নিহত হয়েছেন। কারন মুস’আব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর চেহারা ও রাসূলুল্লাহ ﷺ  এর চেহারার সাথে সাদৃশ্য ছিলো। দেখতে দুইজন অবিকল একই রকম ছিলেন!
.

যুদ্ধ শেষে মুস'আবের ছিন্নভিন্ন দেহখানা পড়ে রইলো!
যখন লাশগুলো দাফনের ব্যবস্থা করা হচ্ছিলো, তখন মুস'আব (রাদিয়াল্লাহু আনহুর) জন্য মাত্র এক টুকরো কাপড় ছিল। যে কাপড় দিয়ে মাথা ঢাকলে পা খালি থেকে যায়, আবার পা ঢাকলে মাথা খালি থেকে যায়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জানানো হলো, মুস’আবের গায়ের কাপড়ে উনাকে দাফন করতে হলে পা ঢাকলে মাথা ঢাকেনা, মাথা ঢাকলে পা ঢাকে না! এখন কি করব?

ভাবতে পারেন, ইনিই সেই মুস’আব, যিনি একটি পোষাক তিনদিনের বেশি পরতেন না। অবশেষে রাসূলুল্লাহ ﷺ ঐ টুকরো কাপড় দিয়ে তাঁর মাথা আর 'ইখলিস' নামক ঘাস দিয়ে পা ঢেকে দিতে বলেন। এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে রাসূলুল্লাহ ﷺ কাঁদতে শুরু করেন, তখন সূরা আহযাবের ২৩ নং আয়াতটি নাজিল হয়।
.مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عٰهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ ۖ فَمِنْهُم مَّن قَضٰى نَحْبَهُۥ وَمِنْهُم مَّن يَنتَظِرُ ۖ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا
.
"মুমিনদের মধ্যে কিছু লোক রয়েছে যারা আল্লাহর সাথে কৃত তাদের প্রতিশ্রুতি সত্যে বাস্তবায়ন করেছে। তাদের কেউ কেউ [যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করে] তার দায়িত্ব পূর্ণ করেছে, আবার কেউ কেউ [শাহাদাত বরণের] প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা (প্রতিশ্রুতিতে) কোন পরিবর্তনই করেনি।" [সূরা আহযাব, আয়াত : ২৩]
.
তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘোষণা দেন –সেই সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! "আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি এরাই হলো শহীদ।

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

No comments

Powered by Blogger.